রবিবার, ০৫ মে ২০২৪, ১১:১৮ অপরাহ্ন

বছরে প্রায় ৩০ হাজার মানুষ কিডনি বিকলের শিকার

বছরে প্রায় ৩০ হাজার মানুষ কিডনি বিকলের শিকার

স্বদেশ ডেস্ক:

বাংলাদেশে অসংক্রামক রোগের মধ্যে কিডনি রোগ সবচেয়ে দ্রুতগতিতে বাড়ছে। বর্তমানে দেশে প্রায় দুই কোটি মানুষ কিডনি রোগে ভুগছেন।

বিশেষজ্ঞরা জানান, প্রতিবছর ২৫ হাজার রোগীর ডায়রিয়া, বমি, অতিরিক্ত রক্তক্ষরণ, প্রসবকালীন জটিলতা, ম্যালেরিয়া ও বিভিন্ন ওষুধের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ায় হঠাৎ করে কিডনি অকেজো হয়ে যেতে পারে। বছরে নানা করণে প্রায় ৫০ হাজার মানুষ দীর্ঘমেয়াদি কিডনি রোগে আক্রান্ত হন। এর মধ্যে ৩০ হাজার রোগীর কিডনি একসময় সম্পূর্ণ বিকল হয়ে যায়। তখন ডায়ালাইসিস বা কিডনি সংযোজন ছাড়া বাঁচার কোনো উপায় থাকে না। কিন্তু উভয় চিকিৎসা পদ্ধতি বেশ ব্যয়বহুল। দীর্ঘমেয়াদি কিডনি রোগের একমাত্র চিকিৎসা প্রতিস্থাপন। তবে কিডনির প্রাপ্যতা ও প্রতিস্থাপন সহজলভ্য নয়। এ ছাড়া একজন রোগীর ডায়ালাইসিস করতে প্রতিবছর ২ থেকে ৩ লাখ টাকার দরকার; যা শতকরা ৯৫ ভাগ রোগীর পক্ষে নির্বাহ করা সম্ভব নয়। ফলে সঠিক চিকিৎসার অভাবে ধীরে ধীরে তারা মৃত্যুর দিকে ধাবিত হয়।

এমন পরিস্থিতিতে আজ মার্চের দ্বিতীয় বৃহস্পতিবার অন্যান্য দেশের মতো বাংলাদেশেও পালিত হবে বিশ্ব কিডনি দিবস। ২০০৬ সালে প্রথম ইন্টারন্যাশনাল সোসাইটি অব নেফ্রোলজি এবং ইন্টারন্যাশনাল ফেডারেশন অব কিডনি ফাউন্ডেশনের উদ্যোগে ৬৬টি দেশে এই দিবস পালন শুরু হয়। এবার এই দিবসের প্রতিপাদ্য ‘সুস্থ কিডনি সবার জন্য- জ্ঞানের সেতুবন্ধে সাফল্য।’ দিনটি উপলক্ষে ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব কিডনি ডিজিজেস অ্যান্ড ইউরোলজিতে (এনআইকেডিইউ) আলোচনাসভার আয়োজন করা হয়েছে। স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক এতে উপস্থিত থাকবেন। এ ছাড়া গণস্বাস্থ্য ডায়ালাইসিস সেন্টারের পক্ষ থেকেও আলোচনাসভার আয়োজন করা হয়েছে।

এনআইকেডিইউ সাবেক পরিচালক অধ্যাপক ডা. মো. ফিরোজ খান বলেন, বিভিন্ন আন্তর্জাতিক পরিসংখ্যান থেকে জানা যায়, বর্তমানে বিশ্বব্যাপী কিডনি রোগীর

সংখ্যা প্রায় ৮৫ কোটি। বাংলাদেশে প্রায় ২ কোটির বেশি লোক কোনো না কোনোভাবে কিডনি রোগে আক্রান্ত। দিন দিন কিডনি রোগের প্রাদুর্ভাব বেড়েই চলেছে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার তথ্যানুযায়ী আশঙ্কা করা হচ্ছে, ২০৪০ সালের মধ্যে ৫০ লাখের বেশি কিডনি বিকল রোগী সংকটাপন্ন অবস্থায় চিকিৎসার অভাবে অকাল মৃত্যুর শিকার হবে। প্রাণঘাতী হিসেবে কিডনি রোগের অবস্থান দুই যুগ আগে ছিল ২৭তম। বর্তমানে এটা ৭ম অবস্থানে আছে। ২০৪০ সালে যা ৫ম অবস্থানে চলে আসবে।

জানা গেছে, দীর্ঘমেয়াদি কিডনি রোগের প্রধান কারণগুলোর মধ্যে অনিয়ন্ত্রিত ডায়াবেটিস, উচ্চ রক্তচাপ ও নেফ্রাইটিস বা কিডনির প্রদাহজনিত রোগ অন্যতম। বিশেষজ্ঞরা বলছেন- আটটি কাজ ও জীবনযাপন চর্চার পরির্বতনের মাধ্যমে কিডনি রোগ প্রতিরোধ সম্ভব। যেমন- কায়িক পরিশ্রম, খেলাধুলা ও নিয়মিত ব্যায়াম, উচ্চ রক্তচাপ এবং ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে রাখা, সুপ্ত উচ্চ রক্তচাপ ও নিয়ন্ত্রণের জন্য নিয়মিত ব্লাড প্রেশার পরীক্ষা, স্বাস্থ্যসম্মত খাবার গ্রহণ করা- যেখানে শাকসবজি ও ফলমূলের পরিমাণ বেশি রাখতে হবে, পর্যাপ্ত পানি পান, ধূমপান থেকে বিরত থাকা, ডাক্তারের পরামর্শ ছাড়া ওষুধ সেবন না করা এবং নিয়মিত কিডনির কার্যকারিতা পরীক্ষা।

মাসব্যাপী ফ্রি মেডিক্যাল ক্যাম্প

১৭ মার্চ বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ১০২তম জন্মবার্ষিকী, ২৬ মার্চ স্বাধীনতা দিবস এবং কিডনি দিবস উপলক্ষে মাসব্যাপী ফ্রি মেডিক্যাল ক্যাম্প আয়োজন করেছে ইনসাফ বারাকাহ কিডনি অ্যান্ড জেনারেল হাসপাতাল। এক মতবিনিময় সভায় আজ ১০ মার্চ থেকে ৯ এপ্রিল পর্যন্ত ফ্রি মেডিক্যাল ক্যাম্পের কর্মসূচি ঘোষণা করেন অধ্যাপক ডা. এম ফখরুল ইসলাম। ক্যাম্পে বিনামূল্যে রোগীদের চিকিৎসা পরামর্শ পাবেন।

কিডনি সম্পর্কিত ইউরিন আরই এবং সিরাম ক্রিয়েটিনিন পরীক্ষা ফ্রি করা হবে। মাত্র এক হাজার টাকার প্যাকেজে (আল্ট্রাসনোগ্রাম, ইসিজি, সিবিসি, ইউরিন আরই এবং সিরাম ক্রিয়েটিনিন) করা হবে হেলথ চেকআপ। এ ছাড়া বিভিন্ন পরীক্ষা-নিরীক্ষায় মিলবে ৫০ শতাংশ ছাড়। প্রায় ৫০ শতাংশ ছাড়ে কিডনির পাথরের অপারেশন করা হবে। ৫ জন হতদরিদ্র রোগীকে এক বছর পর্যন্ত দেওয়া হবে ফ্রি ডায়ালাইসিস। ১৭ মার্চ বঙ্গবন্ধুর জন্মদিনে শিশু বিশেষজ্ঞরা বিনামূল্যে রোগী দেখবেন এবং ৫ জন হতদরিদ্র গরিব শিশুর প্রস্রাবের রাস্তার জন্মগত ত্রুটির অপারেশন ফ্রি করা হবে। ২৬ মার্চ স্বাধীনতা দিবসে বিভিন্ন বিষয়ে বিশেষজ্ঞ ডাক্তারদের দ্বারা বিনামূল্যে রোগী দেখা হবে এবং ৫ জন দরিদ্র গরিব রোগীর প্রোস্টেট অপারেশন ফ্রি করা হবে। থাকবে ফ্রি ডেন্টাল চেকআপও। ক্যাম্প চলাকালে রেজিস্ট্রেশনভুক্ত রোগীদের জন্য উপরোক্ত সুবিধাগুলো প্রযোজ্য হবে।

পহেলা বৈশাখ থেকে অল্প খরচে ডায়ালাইসিস সুবিধা দেবে গণস্বাস্থ্য নগর হাসপাতাল

গণস্বাস্থ্য নগর হাসপাতালে পহেলা বৈশাখ থেকে দরিদ্র কিডনি রোগীদের অল্প খরচে ডায়ালাইসিস সুবিধা দেওয়া হবে। রাত ৮টা থেকে ভোর ৫টার শিফটে হেমোডায়ালাইসিসে অল্প খরচে বিশেষ সুবিধা পাওয়া যাবে। ডায়ালাইসিস চলাকালে হাসপাতাল থেকে ১০০ টাকার ফ্রি খাবারেরও ব্যবস্থা রয়েছে।

দয়া করে নিউজটি শেয়ার করুন..

© All rights reserved © 2019 shawdeshnews.Com
Design & Developed BY ThemesBazar.Com
themebashawdesh4547877